বিএনপি আবু তালেবের, আর আওয়ামী লীগ আবু জাহেলের ভূমিকায়: মামুনুল হক

 



বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ—এর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তিনি বিএনপিকে ইসলামের প্রাথমিক যুগের আবু তালেবের সঙ্গে তুলনা করে তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন এবং আওয়ামী লীগকে আবু জাহেলের সঙ্গে তুলনা করে তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন।

মামুনুল হকের বিবৃতি:

২০২৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মাওলানা মামুনুল হক দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বিরোধী দলগুলো এই পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, "ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।" 

বিএনপি ও আবু তালেবের তুলনা:

মামুনুল হক বিএনপির নিরপেক্ষ ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকার সমালোচনা করে তাদের ইসলামের প্রাথমিক যুগের ব্যক্তিত্ব আবু তালেবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে আবু তালেব ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর চাচা, যিনি নবীর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করেননি। মামুনুল হকের মতে, বিএনপি বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানের প্রতিফলন।

আওয়ামী লীগ ও আবু জাহেলের তুলনা:

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আচরণের সমালোচনা করে মামুনুল হক তাদের ইসলামের প্রধান শত্রু আবু জাহেলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আবু জাহেল ছিলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগের একজন প্রধান বিরোধী, যিনি মহানবী (সা.) এবং মুসলমানদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন। মামুনুল হকের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান নীতিমালা ও কার্যক্রম জনগণের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে, যা আবু জাহেলের শাসনের সঙ্গে তুলনীয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

মামুনুল হকের এই বিবৃতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা তার এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপি নেতারা তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানের সমালোচনাকে অস্বীকার করে বলেন যে, তারা সবসময় জনগণের পক্ষে থেকে সরকারের অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা মামুনুল হকের বক্তব্যকে উগ্রপন্থী ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছেন এবং তাদের সরকারকে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া:

সামাজিক মাধ্যম ও সাধারণ জনগণের মধ্যে মামুনুল হকের এই বিবৃতি নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। কিছু মানুষ তার বক্তব্যকে সমর্থন করে সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কিছু মানুষ তার বক্তব্যকে উগ্রপন্থী ও বিভাজন সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখছেন, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।

উপসংহার:

মামুনুল হকের এই বিবৃতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে তার সমালোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি।

Post a Comment

Previous Post Next Post