সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিক হয়নি!
সয়াবিন তেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ভোজ্যতেল, যা প্রতিদিনের রান্নায় অপরিহার্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সয়াবিন তেলের সরবরাহে অস্থিরতা ও মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সরকারি পদক্ষেপ ও বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও এই সমস্যার সমাধান এখনও সুদূরপরাহত।
সাড়ে ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল মজুত, এক পরিবেশককে জরিমানা !
সরবরাহ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি:
সরকার আমদানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। ধারণা করা হয়েছিল, এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি; দাম বাড়ানোর ১০ দিন পরেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়ে গেছে। মিল পর্যায় থেকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডিলারদের কাছে সরবরাহ কমানো হয়েছে, যা রমজান মাসকে সামনে রেখে সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে।
ভ্যাট ছাড় ও সরবরাহ পরিস্থিতি:
সরকার সয়াবিন তেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড়ের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সয়াবিনসহ বিভিন্ন তেলের ওপর ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্তটি আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে এই পদক্ষেপের পরেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট কাটেনি।
বিশেষজ্ঞ মতামত:
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরনো চেনা সিন্ডিকেট বাজার থেকে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে কারসাজি শুরু করেছে। তাদের টার্গেট আসন্ন রমজান মাস। সরকারের কাছ থেকে দাম বাড়িয়ে নিয়েও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করছে না উৎপাদকরা। মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডিলারদের কাছে সরবরাহ কমানো হয়েছে। ডিলার থেকে খুচরা বাজারেও সয়াবিনের সরবরাহ কমেছে। ফলে ভোক্তারা বিপাকে পড়ছেন।
ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া:
বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাড়তি দামেও চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সয়াবিন তেলের সংকটের বিষয়টি জানা যায়। কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কমে যাওয়ায় পরবর্তীতে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বোতলজাত সয়াবিন।
সরকারি পদক্ষেপ ও বাজার পরিস্থিতি:
সরকার সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বৈঠকে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়াতে রাজি হয়েছে। তবে বাস্তবে বাজারে এর প্রভাব এখনও সুস্পষ্ট নয়।
উপসংহার:
সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সরকারি পদক্ষেপ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। সিন্ডিকেটের কারসাজি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফা বাড়ানোর প্রবণতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।

