আবরার হত্যার আসামি পালানোর ছয় মাস পর কেন জানানো হলো বোধগম্য নয়, বললেন ছোট ভাই

 আবরার ফাহাদ হত্যার আসামি পালানোর ছয় মাস পর কেন জানানো হলো বোধগম্য নয়, বললেন ছোট ভাই

আবরার ফাহাদ image


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামিদের একজনের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ছয় মাস পর প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবরারের পরিবার। তার ছোট ভাই বলেছেন, "আমাদের কাছে এটি বোধগম্য নয়, কেন ছয় মাস ধরে এই তথ্য গোপন রাখা হলো।"

ঘটনার পটভূমি

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল কর্মী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পেছনে কারণ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তার এক মতামত, যা সরকারবিরোধী বলে মনে করা হয়েছিল। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং আন্দোলনের মুখে বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।

আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার চলমান থাকলেও সম্প্রতি জানা গেছে, মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ছয় মাস আগে কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু এতদিন এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, যা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।

আবরারের পরিবারের প্রতিক্রিয়া

আবরারের ছোট ভাই বলেছেন, "আমরা ছয় মাস ধরে ভাবছিলাম, বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। অথচ এখন শুনছি প্রধান আসামির একজন পালিয়ে গেছে! এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা বিচার চাই, কিন্তু এই বিচার প্রহসনে পরিণত করা হলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো পক্ষ থেকে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক ও হতাশাজনক।"

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, "আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করছি। কীভাবে আসামি পালিয়েছে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" তবে ছয় মাস ধরে বিষয়টি গোপন রাখার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, "আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি এবং আসামিকে পুনরায় গ্রেফতারের জন্য দেশের সব সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।" তবে এ ঘটনায় কারা কতটুকু দায়ী, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া

আবরার হত্যা মামলার আইনজীবীরা বলছেন, "এটি বিচার ব্যবস্থার ওপর আঘাত। যদি একজন প্রধান আসামি পালিয়ে যায় এবং তা ছয় মাস পর প্রকাশ পায়, তাহলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।"

একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, "আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। যদি কোনো কারা কর্মকর্তা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।"

ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যে এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

একজন বুয়েট শিক্ষার্থী বলেন, "আমরা মনে করেছিলাম, আবরার হত্যার বিচার দ্রুত হবে। কিন্তু এখন দেখছি, ন্যায়বিচার আদৌ নিশ্চিত হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।"

ভবিষ্যৎ করণীয়

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যদি অপরাধীদের দ্রুত ধরা না হয়, তাহলে এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও জবাবদিহির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

আবরারের পরিবারের একটাই দাবি: "আমরা আমাদের সন্তানের হত্যার ন্যায়বিচার চাই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।"

See More-

Post a Comment

Previous Post Next Post