আফগানিস্তান, ভুটানসহ ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা ট্রাম্পের

 ট্রাম্পের ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা: আফগানিস্তান ও ভুটানসহ বহু দেশ তালিকাভুক্ত




প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় পুনরায় ক্ষমতায় আসলে নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। এতে আফগানিস্তান, ভুটানসহ ৪৩টি দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বৈশ্বিকভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ ও লক্ষ্য

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা এবং সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ করা। তার দাবি, কিছু দেশ থেকে অভিবাসী আগমন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং সেকারণেই তিনি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চান।

ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা এমন দেশগুলো থেকে অভিবাসন বন্ধ করব যেগুলো সন্ত্রাসবাদ এবং অপরাধ প্রবণতার জন্য পরিচিত। আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

যে দেশগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে

যদিও সম্পূর্ণ তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি, সূত্রের দাবি অনুযায়ী আফগানিস্তান, ভুটান, সিরিয়া, ইরান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, সুদান, উত্তর কোরিয়া, লিবিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং কিছু আফ্রিকান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞায় মূলত মুসলিম প্রধান দেশ এবং কিছু উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যা অতীতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত "মুসলিম ট্র্যাভেল ব্যান"-এর মতো পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত সংস্থা (IOM) এই পরিকল্পনাকে “বৈষম্যমূলক” বলে নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, “অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের নামে নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”

আফগানিস্তান ও ভুটানের প্রতিক্রিয়া

আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান সরকার এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে কাবুলের কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এটিকে “অন্যায় ও অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যদিকে, ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে যে, “ভুটান কখনো সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতা দেশ ছিল না, তাই আমাদের নাগরিকদের ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ অন্যায্য।”

ইউরোপ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের প্রতিক্রিয়া

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এই পরিকল্পনাকে বিশ্বায়নের নীতির পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয়। ব্রিটেন এবং কানাডাও এই পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।



সমর্থকরা যা বলছে

ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ থেকে রক্ষা করবে। রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, “প্রথমে আমেরিকা” নীতির আওতায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে নেওয়া জরুরি।

বিরোধীরা যা বলছে

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন একে “জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের আরেকটি উদাহরণ” বলে অভিহিত করেছে। তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য প্রভাব

এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে, নিম্নলিখিত বড় প্রভাব পড়তে পারে:

  1. শিক্ষা ও গবেষণা: মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। বিশেষত, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

  2. ব্যবসা ও বিনিয়োগ: নিষেধাজ্ঞার ফলে কিছু দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা খাতে এশিয়ান দেশগুলোর অবদান রয়েছে।

  3. মানবিক সংকট: শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য এটি আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলো থেকে আগত শরণার্থীরা আরও সমস্যায় পড়বে।

  4. যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি: অতীতের মতোই, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপসংহার

ট্রাম্পের ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যদিও এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি, তবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অভিবাসন নীতি এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করবে মার্কিন জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর, কারণ ২০২৪ সালের নির্বাচন ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার ভাগ্য নির্ধারণ করবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post